পরিবহন সেক্টরের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে: ইলিয়াস কাঞ্চন

Passenger Voice    |    ০৫:৫৭ পিএম, ২০২২-০১-০৮


পরিবহন সেক্টরের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে: ইলিয়াস কাঞ্চন

পরিবহন সেক্টরের নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসলে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণেও কোন পরিবর্তন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।

শনিবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে '২০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান উপস্থাপন' উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ শঙ্কা প্রকাশ করেন।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বারবার বলা সত্ত্বেও দেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে ডাটা সেন্টার করা হচ্ছে না। তাই সড়ক দুর্ঘটনার সঠিক পরিসংখ্যান কেউ দিতে পারছে না। তবু আমরা তৈরি করছি।

এসময় সারাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে একরাশ সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো—সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ করা, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্দেশিত ৬ দফা ও ১১ দফা সম্বলিত টাস্কফোর্স কর্তৃক দাখিলকৃত ১১১টি সুপারিশনামা যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা। সেই সঙ্গে হাইওয়েতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ তত্ত্বাবধানে উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল গঠন করে তাদের মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মহাসড়কের যাবতীয় বিষয়গুলো মনিটরিং করতে হবে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, 'স্কুলের পাঠ্যক্রমে সড়ক দুর্ঘটনারোধের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে—তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। ঢাকা রুট ফ্রাঞ্চাইজির যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন জরুরি। এতে যানজট এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হবে। সেই সঙ্গে ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, নির্দিষ্ট স্থান ব্যতিরেকে যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো, ওভারটেকিং করা, পাল্টা-পাল্টি ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী ও মাল বোঝাই করা, গাড়ির ছাদে যাত্রী বহন করা, ওভার ব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস বা জেব্রাক্রসিং থাকা সত্ত্বেও সেগুলো ব্যবহার না করার প্রবণতাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।'

তিনি বলেন, সরকার গৃহীত ‘এসইআইএফ' প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৪১০ জন গাড়িচালক প্রশিক্ষক তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৯৬ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। যার মধ্যে নিরাপদ সড়ক চাইও এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। বাকি ৭১৪ জনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এ বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে। আশার কথা—এই কর্মসূচির আওতায় ৩ লাখ গাড়িচালকদের আপগ্রেডিংয়ের জন্য ১২ ও ২৪ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে লাইসেন্সবিহীন চালকরা ২৪ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে বৈধ লাইসেন্সের আওতায় আসবে এবং হালকা ও মধ্যম গাড়ির চালকরা ১২ দিনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভারী গাড়ির লাইসেন্স পাবে যা দেশে দক্ষ চালক সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে।'

'ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল মহাসড়কের মতো সকল মহাসড়ক এবং প্রধান সড়কে একমুখী চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়ে দীর্ঘ এবং উচ্চতাসম্পন্ন সড়ক বিভাজকের (রোড ডিভাইডার) ব্যবস্থা করতে হবে। সকল মহাসড়ক এবং প্রধান সড়ককে অবশ্যই ন্যূনতম চার লেনে উন্নীত করতে হবে। মহাসড়কের পাশে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের মত দু'পাশে ধীর গতির যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা সড়ক (সার্ভিস রোড) নির্মাণ করতে হবে। পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করে যেখানে ফুটপাত নেই সেখানে ফুটপাত তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পুনরায় যেন ফুটপাত দখল না হয় এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।'

এসময় লিখিত বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমাদের সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) মানব কল্যাণের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে বিভিন্ন কার্যক্রম অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমাদের অকুতোভয় কর্মীরা স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, যাতে করে এ দেশের মানুষ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।